23 Jan গ্রাহকের আস্থায় আবাসন খাতে সঠিক সময়ে সর্বোচ্চ মানে যুগোপযোগী নতুনত্ব আনতে পেরেছি : ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন
সিপিডিএল, একটি স্থানীয় ব্যবসা উদ্যোগ, তরুন এক উদ্যোক্তা, অনভিজ্ঞ কিন্তু দুরন্ত সাহসী ইফতেখারের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে অনিশ্চয়তা, প্রতিকূলতা আর আস্থাহীনতার কণ্টকাকীর্ণ পথে।
আজ সেই উদ্যোগের বয়স গড়িয়ে আঠারো ছাড়িয়ে গেলো, অনিশ্চিত যাত্রা আজ অগণন মানুষের নিশ্চয়তার নাম, অনাস্থা আজ অপরিসীম আস্থায় প্রতিস্থাপিত, অনভিজ্ঞতা আজ দক্ষতায় অভিযোজিত, স্থানীয় ব্যবসা উদ্যোগ আজ জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত, ক্ষুদ্র সিপিডিএল আজ সুবিশাল সিপিডিএল পরিবার, গ্রাহক, ভূমিমালিক, কন্ট্রাক্টর, এসোসিয়েটস, সাপ্লাইয়ার্স সকলের নির্ভরতার প্রতীক।
এই আঠারো বছরে সিপিডিএল প্রকল্প গ্রহণ, নির্মাণ এবং হস্তান্তরেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেনি, মুনাফা অর্জন বা ব্যবসার কলেবর বৃদ্ধি‘র প্রথা ভেঙে সৃষ্টি করেছে একটি পারিবারিক আবহ, গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট পরিসরে হ্যাপিনেস সৃষ্টি করার জটিল ফিলোসফি, প্রতিষ্ঠিত করেছে সম্পর্কভিত্তিক ব্যবসা–সংস্কৃতির। সকলের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে সম্মান ও আরাধ্য স্বীকৃতি। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মনস্তত্ত্ব গঠনে ‘বিয়ন্ড বর্ডার, হ্যাপি টুগেদার‘ শিরোনামে একটি আদর্শিক ফিলোসোফি ধারন করা যেতে পারে তা ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখারের সিপিডিএল পরিবারের কাছাকাছি না আসলে কেউ বুঝতে পারবে না।
‘গুড গভর্নেন্স‘ বা ‘ফাইনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি‘ ইত্যাদি সিপিডিএল এর জন্য আজ কোন অলীক ভাবনা নয়, অর্জিত বাস্তবতা। ফলে আবাসন শিল্পখাতে সিপিডিএল এর বিশ্বস্ততা সুপ্রতিষ্ঠিত, এদের হাত ধরে আবাসন খাতে এসেছে অনুকরণীয় আদর্শিক পরিবর্তন। দেড় যুগে প্রায় ৪০টি প্রকল্প হস্তান্তর করেছে, নির্ধারিত সময় মেনে, সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করে। সেই সঙ্গে ইনোভেশন করেছে যুগোপযোগী সব আইডিয়ার। ফুল–ফার্নিশড স্মার্ট অফিস, সেকেন্ড হোম কনসেপ্ট, গেইটেড কমিউনিটি, স্টার এবং সাফায়ার ক্লাস রেসিডেন্স এর মতো সৃজনশীল ধারণার সাথে পরিচয় ঘটিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই দেড়যুগের পথচলা নিয়ে স্বপ্নবাজ ইফতেখারের সাথে আলাপকালে সিপিডিএল নিয়ে তিনি বলেন, এই খাতের প্রধান সমস্যা ছিল মানুষের আস্থাহীনতা। নির্ধারিত সময়ে পরেও প্রকল্প নির্মাণ–কাজ সম্পন্ন না করার অনিয়মই তখন প্রচলিত নিয়ম ছিল। আমি চিন্তা করলাম, এই ধারণা দূর করতে হবে। এই চিন্তা থেকে প্রতিষ্ঠা সিপিডিএল।
তিনি জানান, আমাদের প্রথম প্রকল্প জামালখানের চৌধুরী হাইটস। ২৪ মাস মেয়াদি এই প্রকল্প আমরা ২২ মাসেই বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা প্রতিশ্রুত সময়ে প্রকল্প হস্তান্তর করার সংস্কৃতি চালু করেছি, সিপিডিএল–ই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা প্রকল্প সমাপনে টার্গেট টাইম অনুসারে কাউন্ট ডাউন টাইমার সেট করে।
বর্তমানে ঢাকা–চট্টগ্রামে ৩০টি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পূর্ণ উদ্যমে চলমান। সিপিডিএল প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন আরও জানান, ভবিষ্যতে কঙবাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুর বা দেশের অন্যান্য গ্রোথ সেন্টার ভিত্তিক প্রকল্প হাতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রামকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিত একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতেই আমরা কাজের ব্যপ্তি সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। ঢাকা দিয়ে সেই অভিযাত্রা আমরা ইতোমধ্যে শুরু করেছি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দু‘টি, উত্তরায় দু‘টি, রাজধানীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র পুরানা পল্টনে একটি প্রকল্প নির্মাণাধীন এবং আমেরিকান অ্যাম্বেসির সন্নিকটে বারিধারা জে ব্লকের পাশে নুরের চালায় শুরু হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক কন্ডোমিনিয়াম নির্মাণের কাজ, যা আবাসন বিনিয়োগে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া গুলশান, বনানীসহ বেশ কিছু প্রাইম লোকেশনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন।
‘কোন বৈশিষ্ট্যে সিপিডিএলকে আলাদা ভাবা হয়’ এমন প্রশ্নের উত্তরে ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন বলেন, সিপিডিএল তার কর্মোদ্যোগের মাধ্যমে দেশের রিয়েল এস্টেটে প্রতিনিয়ত যুগোপযোগী পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা শুধু নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখিনি, গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর পরবর্তী সব ধরনের সেবাও প্রদানে আমরা অত্যন্ত যত্নশীল। এই সেবা দ্রুততর এবং সহজভাবে প্রদানের জন্য আমরাই বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা মোবাইল অ্যাপভিত্তিক আফটার হ্যান্ডওভার সেবাপদ্ধতি চালু করেছি। গুগল প্লে স্টোর থেকে সহজেই সিপিডিএল কেয়ার অ্যাপটি নামিয়ে নেওয়া যাবে। অ্যাপভিত্তিক সার্ভিসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করতে আমরা গড়ে তুলেছি হ্যাপিনেস টিম নামে নিবেদিত প্রাণ দক্ষ কর্মী বাহিনী।
চট্টগ্রামে কনডোমিনিয়ামের ধারণা পরিচিত করিয়েছে সিপিডিএল। এক ছাদের নিচে বসবাসের আনুষঙ্গিক সব সুবিধা নিয়ে অংশগ্রহন মূলক লাইফস্টাইলই কনডোমিনিয়াম কনসেপ্ট এর মূল ভাবনা। এসব অ্যাপার্টমেন্টে সুইমিং পুল, ওয়াকওয়ে, জিমনেশিয়াম, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, লাউঞ্জ, লাইব্রেরি, বাচ্চাদের খেলার স্থানসহ প্রয়োজনীয় সব আধুনিক সুবিধা থাকে।
চট্টগ্রামে আধুনিক লাইফস্টাইলের সুবিধা–সংবলিত প্রথম এ ধরনের অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেছে সিপিডিএল। নগরীর মেহেদীবাগ এলাকায় ৩০ কাঠা জমিতে ক্রিমসন ক্লোভার নামে প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হয় ২০১৪ সালে। একে বলা হয় চট্টগ্রামের প্রথম স্টার ক্লাস রেসিডেন্স।
প্রতিষ্ঠানটি সবসময় সৃজনশীল ও নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করছে। কনডোমিনিয়ামের আদলে মধ্যবিত্তদের জন্য নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে ৬০ কাঠা জমিতে ডাউন–টাউন সিপিডিএল নামে প্রকল্পটি গ্রাহকদের মাঝে খুবই জনপ্রিয়।
ফয়’স লেক এলাকায় ২০ কাঠা জমিতে দ্য গ্যালারিয়া নামে সেকেন্ড হোম কনসেপ্টে একটি ফিউচারিস্টিক প্রকল্প করছে সিপিডিএল। ১৮ তলা ওই ভবনে ছোট ছোট ১০০টি ইউনিট করা হচ্ছে। বিজনেস ট্রাভেলিং সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসেন অনেকে। তাদের জন্য এই প্রকল্প। ৩৭৫–৯৭৫ বর্গফুটের এসব ছোট ছোট ইউনিটে বছরের কিছু সময় নিজেরা থাকার পাশাপাশি হোটেল/ হোস্টেলের মতো করে ভাড়াও দিতে পারবেন ফ্ল্যাট মালিকরা। ইফতেখার হোসেন বলেন, আমরা সবসময় একটু ভিন্নভাবে চিন্তার চেষ্টা করি। জামালখান এখন মুক্ত বাতাসে বসার মতো জায়গায় পরিণত হয়েছে। এটিও সিপিডিএলের হাত ধরে শুরু। সিপিডিএল পরিবার চট্টগ্রাম নগরীকে নান্দনিক রূপে সাজাতে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। নান্দনিক ও সবুজ চট্টগ্রামকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিতে সিটি–ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে নগরীর মর্যাদা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে উন্নীত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কোম্পানিটি।
সবুজের প্রতি আমাদের দায়িত্বশীলতা নান্দনিক চট্টগ্রামের প্রাথমিক উদ্যোগ অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। সিপিডিএল প্রেসিডেন্ট জানান, আমাদের প্রতিটি প্রকল্পে সবসময় চেষ্টা করি সবুজকে লালন করতে। আধুনিকায়নের সাথে সবুজের মিশেল থাকুক। আর সেই ভাবনা থেকে দেবপাহাড় এলাকায় গড়ে তুলেছি ‘সবুজ ঐতিহ্যে অনন্য দেবপাহাড়’ নামে একটি প্রকল্প, যা দেবপাহাড় এলাকার পরিবেশের আমূল পরিবর্তন করে একটি নিরাপদ অভিজাত আবাসিক এলাকায় পরিণত করছে।
একই ভাবে আন্দারকিল্লা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক চত্বর, সিরাজউদ্দৌলা রোড সড়ক দ্বীপ সবুজায়ন যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পকে আমরা বলি সোশ্যাল হ্যাপিনেস। সম্প্রতি কাজ শুরু করেছি জাকির হোসেন রোডের এ যাবতকালের সবচেয়ে সুপরিসর সোশ্যাল হ্যাপিনেস প্রকল্প নিয়ে, ইতোমধ্যে ও আর নিজাম রোড সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি পর্ব চলছে। এই প্রতিটি উদ্যোগ জনমানুষের জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। সবসময় আর্থিক লাভ হিসেবে নিয়ে কাজ করা যায় না। যে সমাজ আমাদের, যে কমিউনিটিতে আমাদের জন্মসূত্র প্রোথিত সে সমাজের জন্য কিছু করতে না পারাকেই ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার অক্ষমতা মনে করেন, অপ্রাপ্তি বিবেচনা করেন। এই সোশ্যাল হ্যাপিনেস যে প্রশান্তি দেয় তা টাকার বিনিময়ে পাওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেন ইফতেখার।
বিভিন্ন প্রকল্পে ছাদবাগান ফ্ল্যাটবাসীদের মধ্যে একতা সৃষ্টি করে। প্রতিটি পরিবার কে গন্ডি বদ্ধ জীবন থেকে অবমুক্ত করে সামাজিকতায় উদ্ধুদ্ধ করে। বিভিন্ন পর্যায়ে সবুজায়নের স্বীকৃতি হিসেবে গতবছর নান্দনিক মেয়র অ্যাওয়ার্ড লাভ করে সিপিডিএল। এটা সিপিডিএল পরিবারের জন্য অনেক সম্মানজনক অর্জন এবং অঅনুপ্রেরনাময়
ইফতেখার হোসেন বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ হলেই আমাদের কাজ শেষ হয় না, নতুন দায়িত্ব হিসেবে একজন গ্রাহক কিভাবে অ্যাপার্টমেন্টের সবকিছু যথাযথ পরিচালনা করবেন তা নিয়েও নিয়মিত মতবিনিময় করা হয়। কারিগরি সহযোগিতা হতে শুরু করে সব ধরনের সেবার দরজা সিপিডিএল এ সর্বদা উন্মুক্ত।
আমরা শুধু আর্থিক লাভের জন্য কাজ করছি না। একজন গ্রাহক যখন আমাদের টাকা দেন, আমরা তাকে প্রথাগত অর্থে টাকা মনে করি না, এটা আমাদের কাছে ঐ গ্রাহকের পবিত্র আমানত, আমরা এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কাস্টোডিয়ান মাত্র। ১০০ বছর পরও যেন মানুষ সিপিডিএলকে মনে রাখে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
সিপিডিএল প্রতিষ্ঠার পর সময়ের প্রয়োজনে আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ইফতেখার হোসেন।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে নদীর দুই পারের যোগাযোগ সহজ হবে। শহরের বাইরেও কিছু মানুষ বসবাস করতে চান। কিন্তু আধুনিক সুযোগ–সুবিধার অভাবে তারা যান না। কর্ণফুলীর তীরবর্তী আনোয়ারা উপজেলায় ওয়ান সিটি টু টাউন কন্সেপ্টে স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছে সিপিডিএল। সেখানে ৬ একর জমিতে অনিন্দ্যনগর নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইফতেখার হোসেন বলেন, শহরের বাইরে আনোয়ারা একটি গ্রোথ সেন্টার। ওয়ান সিটি টু টাউনের সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে সেখানে স্যাটেলাইট সিটি গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। স্কুল, কলেজ, পার্ক, ধর্মীয় উপসানালয়সহ আধুনিক সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে মানুষ সেখানেও বসবাস করবে। আমরা ধীরে ধীরে কাজ করছি। স্যাটেলাইট সিটি গড়ার লক্ষ্যে সিপিডিএল নীড় নামে আলাদা কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এদিকে উত্তর চট্টগ্রামে হাটহাজারীতে অনুরূপ প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিসহ সংকটের মধ্যে যাচ্ছে রিয়েল এস্টেট এবং নির্মাণ শিল্প। কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করছে সিপিডিএল এমন প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখার বলেন, এসব চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সামলানোই একজন প্রকৃত ব্যবসায়ীর কাজ। আমি মনে করি ক্রাইসিস মানেই অপরচুনিটি। ব্যবসা করতে গেলে নানা ধরনের পরিস্থিতি সামনে আসবে। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।